গতকাল দ্য ডেইলি ইনকিলাব একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে এক ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার চাঞ্চল্যকর চিত্র ও তথ্য প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ঘটনাটি ছিল একটি সাজানো নাটক, যার পেছনে ছিল প্রভাবশালী গোষ্ঠীর হাত।
প্রতিবেদনটি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে আগুনের মতো। নেটিজেনরা ক্ষোভ, আতঙ্ক ও উদ্বেগ প্রকাশ করতে থাকেন। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইনকিলাবের মূল লিঙ্কটি ‘৪০৪ – পাওয়া যায়নি’ বার্তায় রূপান্তরিত হয়।
এই প্রতিবেদন সরিয়ে নেওয়ার ঘটনা সাংবাদিক মহলে ও সচেতন নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। গণমাধ্যমকর্মীরা বলছেন, এটি স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক চাপে গলা টিপে ধরার একটি উদাহরণ। কেউ কেউ এটিকে “নতুন ফ্যাসিস্ট শাসনের সূচনা” বলেও উল্লেখ করেছেন। অতীতে শেখ হাসিনা সরকারের সময়ও এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে—যেখানে অস্বস্তিকর সত্য সামনে আসলেই তা ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ বা ‘রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা’ আখ্যা দিয়ে সরিয়ে ফেলা হতো। বর্তমান সরকারও কি সেই একই পথে হাঁটছে? এমন প্রশ্ন আজ জনগণের মুখে মুখে।
২৪ জুলাইয়ের বিপ্লব ছিল তথ্যের মুক্ত প্রবাহের বিপ্লব। সাংবাদিক, ছাত্র, তরুণ সমাজ সবাই যে স্বপ্নে বিভোর ছিল, আজ সেই স্বপ্ন যেন ক্রমেই ফিকে হয়ে যাচ্ছে। একদিকে সংবাদপত্রের ওপর নিয়ন্ত্রণ, অন্যদিকে রাজনৈতিক বিরোধীদের হুমকি—সব মিলিয়ে একটি নতুন ধরনের ফ্যাসিবাদী শাসনের ছায়া যেন ঘনিয়ে আসছে।
প্রশ্ন হচ্ছে—যে সরকার জনগণের ঘাম-রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হলো, তারা কি জনগণের সেই অধিকার সুরক্ষিত রাখতে পারছে? নাকি তারাই এখন ক্ষমতার অপব্যবহার করে সত্যকে গলা টিপে ধরছে?
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা একটি দেশের গণতন্ত্রের প্রাথমিক শর্ত। ইনকিলাবের প্রতিবেদন সরিয়ে নেওয়া কোনো সাধারণ ঘটনা নয়—এটি একটি পূর্বাভাস, যে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার লড়াই এখনও শেষ হয়নি। জনগণের আশা, এই সরকার যেন ২৪ জুলাইয়ের চেতনা ভুলে না যায়।